Header Ads

আমি আমার মেয়ের জন্য সব করতে পারি



-কি করছো বাবা!? এতো মন দিয়ে আকাশের দিকে কি দেখছো?? পাখি??
--নাহ। ভাবছিলাম,আমার পোষা পাখিটাই তো উড়ে পালিয়েছে! 
--কে?? মায়ের কথা বলছো!??
'দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার আকাশের দিকে তাকালেন মনজুর সাহেব।'
--তোর মুখটা শুকনো লাগছে কেনো মা?? তোর দিকে তাকাতে পারছিনা। তাকাকেই বুকটা কেমন করে উঠছে। 
--ও কিছুনা। তোমার মনের ভুল।
মা গিয়ে ভালোই করেছে। মায়ের জায়গায় আমি হলে এটাই করতাম।
--তাহলে মায়ের সাথে চলে গেলি না যে??
--বাবা শোনো,আমি আমার বাবাকে একটু বেশি ভালোবাসি।
--খারাপ বাবাকে ভালোবাসিস কেনো!?
--তুমি স্বামী হিসেবে মায়ের কাছে খারাপ হতে পারো। তবে বাবা হিসেবে খুবই ভালো।
কারণ আমি জানি তুমি একজন চেইন স্মোকার। কিন্তু কখনও আমি নিজ চোখে তোমায় সিগারেট ফুঁকতে দেখিনি। কারণ তুমি দেখাওনি। যেদিন মদ্যপান করে বাড়ি ফিরো সেদিন আমার সঙ্গে দেখা করোনা। কপালে আদর করে ঘুম পাড়িয়েও দাওনা। কারণ তুমি কখনও চাওনি মেয়ের চোখে খারাপ বাবা হতে। সবসময় আমায় আদরই করে গেছো। শাসন করে শুধু মা। 
--মাকে কেমন ভালোবাসিস??
--বলতে পারবনা। এটা কঠিন প্রশ্ন।
--তুই কি জানিস তিথি?? তোর মাকে আমি কি পরিমাণ ভালোবাসি??
--জানি। আমি সব জানি বাবা। কিন্তু তোমার খারাপ নেশা আর তোমার বদ অভ্যাস গুলোর জন্য সেই ভালোবাসা মেঘলা আকাশের তারকারাজির মতো ঢেকে গেছে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছিনা।
--তিথি তোর এই গুছিয়ে কথা বলাটা আমার খুবই ভালো লাগে। ঠিক তোর মায়ের মতো।
শোন মা,আমি খারাপ মানুষ হতে চাইনি। জানিনা কোন অবচেতন মন আমাকে দিয়ে এসব করায়। যখন সেই সময়ে চলে যাই তখন যেনো হারিয়ে যাই। আমি সত্যিই চাইনা। বিশ্বাস কর।
--বিশ্বাস করলাম। তবে বাবা,আমি যতদূর জানি তুমি এই পৃথিবীতে আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো তাইনা???
'হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন মনজুর সাহেব'
--তোমার সমস্ত খারাপ নেশা গুলো যদি আমি আয়ত্ত করি তোমার কেমন লাগবে??
--নিশ্চয়ই ভালো লাগবেনা। 
--যদি তোমার সামনেই তোমার মতো করে আমিও সিগারেট ফুঁকি। আর বন্ধুদের সাথে রাতভর আড্ডা দিয়ে, মদ্যপান করে শেষরাতে বাড়ি ফিরি। ভালো লাগবে??
--কি বলছিস উল্টোপাল্টা?? (চোখ রাঙ্গিয়ে)
--ঠিকই বলছি। বাবা যেমন মেয়ে তো তেমনই হবে তাইনা?? আমি আর তোমার ভালো মেয়েটা থাকবোনা। তোমার মতোই হবো। তোমার থেকে শিক্ষা নিয়ে।
--তুই কি চাচ্ছিস??
--আমি কিছুই চাচ্ছিনা বাবা। শুধু তোমাকে এটা জানিয়ে রাখি,গত তিনদিন ধরে মা চলে গেছে মামার বাড়ি। এই তিনদিন আমি রান্না করে দিয়েছি। তুমি আহার করেছ। আমি পরে খেয়ে নেবো বলেছি। কিন্তু আমি এই দুদিনে পানি ছাড়া কিছুই খাইনি।
--তিথি কি বলছিস এসব মা????
'স্বর ভারী হয়ে এলো বাবার'
আমার মা কষ্ট পাচ্ছে। আমার বাবাও মাকে ছাড়া কষ্ট পাচ্ছে। 
তোমাদের মেয়ে যখন মারা যাবে তখন তোমরা আলাদা হয়ে গেলেও সে দেখবোনা। এটাই ভালো হবে তাইনা বাবা??
--তিথি এক্ষুনি চল। তোকে খায়িয়ে দেবো নিজ হাতে।
--সরি বাবা। সেটা সম্ভব না।
--চল মা। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিস তুই। আমি তোর দিকে তাকাতে পারছিনা।
সেইদিন গড়িয়ে পরদিন হলো। তিথি না খেয়েই রইলো। শত চেষ্টা করেও খাওয়ানো গেলোনা ওকে। শয্যাশায়ী হয়ে গেছে সে। 
তিথির মা আমিনা মোস্তারী কেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা। বাবা পাগলের মতো হয়ে গেলেন। ডাক্তার ডেকে সেলাইন দেয়া হয়েছে।
--তিথি মা! 
'বাবার চোখ টলটল করছে'
আমি আমার মেয়ের জন্য সব করতে পারি। আমি সবকিছু ছেড়ে দিবো তোকে প্রমিস করছি। তোর মাকেও ফিরিয়ে আনবো। আমরা আবারও অনেক বেশি ভালো থাকবো। 
--যদি প্রমিসের কোনো নড়চড় হয়??
--হলে ভাববো আমি চিরতরে আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছি।
--বাবা এখন আমার ক্ষুধা পাচ্ছে খুব। প্লিজ কিছু খায়িয়ে দিবে???
'মেয়ের কথা শুনে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন মনজুর সাহেব। দ্রুত ভঙ্গিতে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে গেলেন মেয়ের খাবারের খোঁজে...
--দেখো মা! আজ আকাশটা অনেক সুন্দর লাগছেনা!??
--হু লাগছে। আর আমার তিথি মনিকেও পরীর মতো লাগছে!
"--তিথি তোর মাকেও কিন্তু কম সুন্দর লাগছেনা। আমি প্রতিদিন তার মাঝে নতুন কিছু সৌন্দর্য আবিষ্কার করি। রুপ,গুণ দুটোতেই"
"--তিথি তোর বাবাকে ঢং করতে নিষেধ কর। ঢং আমার একদম পছন্দ না"
তিথি জোড়ে হেসে উঠলো! ছাদের উপর সেই প্রফুল্ল চিত্ত হাসি যেনো প্রতিধ্বনি হলো শহরের এ দালান থেকে ও দালান!
--বাবা! আমায় একটা আদর করে দাওতো.... 
মনজুর সাহেব মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আদর করলেন! দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা ঘন একটা আবহাওয়া...
যেমনি দূরের আকাশে!তেমনি সবার চোখে....
দুঃখ,জড়া গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে একরাশ সুখ যেনো সকলের মনে.......




আমাদের ফেসবুক পেজ লিঙ্ক

No comments

Powered by Blogger.